17 Dec, 2016 * Editor: Dipankar Dutta * Email: deepankar_dutta@yahoo.co.in * Mobile: 9891628652 * Delhi

Dipankar Dutta is no more. We pray that may his soul rest in peace.

প্রণব চক্রবর্তী




শ্যেনচক্ষু, তুমি জান, অমৃতের স্বাদ

রঙ-প্রচ্ছদের আড়াল থেকে যদি বেরিয়ে আসে একাকী মানুষ স্তব্ধতার গ্রানাইট দিয়ে বেজে যায় জুতোর শব্দ আর নিচে এই ভাসমান বস্তির দেশ- হেঁটে যেতে যেতে দেখে ফেলে অন্তিম ভাস্কর্যে লীন হয়ে আছে ঠা-ঠা সব রক্তাক্ত চাতাল, জরা নেই, বিরোধ নেই নক্ষত্র নিয়ে, ওতপ্রোত শিকড় প্রান্তিকতায় ছড়িয়ে শুধু খেলা শুধু কোলাহল জল-স্থল-আকাশের মায়াসিদ্ধ বিভক্ত মেরুতে, তবে তার উচ্চারণ হয়ে অরুণ বসুর কবিতা।  যেন এক দমবন্ধ শিল্পীর চারপাশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো মেঘ রোদ তুষারের অপরূপ বর্ণিতপরাগ, এবং বলা হয়েছিলো সময় নামক এই ছড়ানো ক্যানভাসে কিছু আঁকো, কিছু বলো, কিছু বোঝাবার চেষ্টায় ক্রমশই বিলীন হয়ে যাও অন্তর্লীন অবগাহনে। কবি তাই একাকার দিন ও রাত্রির অন্ধ গোলার্ধ জড়িয়ে আপ্রাণ ছড়াতে চাইলো কথা — ব্যথার কথা, স্বপ্নের কথা, স্বপ্নহীনতা, অভিষেক, বিসর্জন ও মৃত্যুর কথা।  মৃত্যু অতিক্রান্ত সর্বময় কোনো চিরন্তনতার পথে সে মেলে ধরলো ব্যাপৃত পাখনা, আর সেই হীরক-সংঘাত থেকে উপর্যুপরি বিচ্ছুরণের ফুলকি জমতে থাকলো অক্ষরে, শব্দে, বাক্যে, যতি-তে। এবং এভাবেই একদা অজ্ঞাতবাসের প্রধান পুরোহিত আজ উজ্বল হয়ে উঠলেন নিকটবর্তী অনুজদের প্রখর মননে, স্মৃতি এবং চর্চায়।  স্থানিকতার দেওয়াল কবে বালু ঝরিয়ে উবু হয়েছে 'অনুশাসন ব্যতীত আজ' নামক কাব্যগ্রন্থে।  ক্রমেই পরিকল্পনা এবং প্রকাশে-ব্যর্থতার দগ্ধতম আঁচে সিদ্ধ হয়েছে 'চতুর্দশ পংক্তির বাগান', 'ভুবন ও কামপোকা' কিংবা এমন আরও কোনো পাণ্ডুলিপি যার হদিস আমরা জানি না। অবশেষে কবি যখন এপিটাফে লিখে ফেলেন— "পাড়ি দিতে হবে কোথাও যা হোক/ দেখেছি আমরা মধুর প্রভাতে/ তোমাকে সরল পত্রবাহক'' — কেমন স্তব্ধ হয়ে ভাবতে হয়, কী সেই শুদ্ধতম অগ্নি যার দাহ্যাবশিষ্ট ছাই থেকেও এভাবে স্বতঃস্ফূর্ত উড়তে পারে কবিতা নির্মাণের জন্যই পরবর্তী উদ্যোগ, উৎকণ্ঠা এবং উৎসাহ ! আমরা কবিতার অন্তর্গত সরল পত্রবাহককে পেয়ে যাই কবিরই মানুষ কাঠামোর চকিত শিহরণে।  ডেকে বলি - হে সরল পত্রবাহক, তোমার বোধিমুখ নির্গত মণীষার যে ঔজ্জ্বল্য, তাকে স্বার্থক করো, নতুনতম কবিতা-পংক্তির স্বচ্ছন্দ সৃজনে। তেজস্ক্রিয় বিকিরণে অ-কবিতার মুমূর্ষু হট্টগোলে শুদ্ধতম কবিতা তীব্র হয়ে উঠুক মন্ত্রমাধুর্যে। এমন কিছু হোক যাকে ঠোঁটে নিয়ে বাংলাভাষাকে ভাবতে পারি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তিমির বিনাশের শপথে তিমিরবিলাসীর অহংকার বিদ্ধ হয়ে গড়াক ধুলোয়। 


২. 
প্রার্থিত অরণ্যে খুব একা একদা তরুণ যুবক অপ্রতিরোধ্য জিজ্ঞাসায় ফাটিয়ে দিয়েছিলো বৈধতার রাষ্ট্রিয় শিকল। ক্রোধ আর শ্লেষ, প্রেম এবং প্রত্যাশার এক মিথুন ভাস্কর্য অরুণ বসুর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অনুশাসন ব্যতিত আজ'। তাঁর কবিতা-বাসরের প্রাক্-আয়োজনে যেন এক শিকল ফাটার আওয়াজ।  যদিও সে আওয়াজ মুদ্রিত হরফের তন্ত্র-মাফিক শ্লোগান-মুখরতা নয়। বরং গভীর গম্ভীর এবং আণবিক দেওয়ালির হর্ষে প্রোজ্জ্বল এক বস্তুময় পৃথিবী, যেখানে মানুষ সর্বাংশে মানুষেরই মতো দেশ-কাল-পাত্রের গণ্ডী উত্তীর্ণ চূড়ান্ত কোনো অনন্তের সওয়ারি। যার কানে বেজে ওঠে "বাঁশি তুমি সৌরবীজ/ ক্ষার অবয়বী"। কিংবা "সে আমাকে দিয়েছিলো বাঁশি/ সে আমাকে দিয়েছিলো বেথুন কলেজ/ আমি এতো মেয়ে নিয়ে কি করবো -"। প্রব্রজ্যার রসঘন যৌনতৃপ্তি যেন তার করায়ত্ত, এবার তাকে যাত্রা করতে হবে অসুর আক্রান্ত কোনো ঘোরযুদ্ধে।  দামাল হওয়ার মতো অজ্ঞাতবাসের পাতায় তাই ঘোষিত হয় 'ঝড়' নামের আপাত সরল কিছু অভিজ্ঞান —
              পৃথিবীর দিকে দিকে বন্দী ও নিরন্ন মানুষের মুক্তির সদম্ভ ঘোষণাকে 
              আমি পবিত্র-যুদ্ধ বলে মনে করি 
                                         এ আমার অহংকার 
              আর আজ ভারতবর্ষকে আমি সত্যি সত্যি ভালোবাসি বলে 
              নতুন প্রজন্মের হাতে সুনিশ্চিত বন্দুক তুলে দিতে চাই 
                             এ আমার দুঃসাহস, ঝড়, মহাসনদ   

ভাবলে অবাক লাগে এই সব সহজ শব্দগুচ্ছের নিবিড় মোহনায় ঘূর্ণাবিষ্ট হয়েও পিছলে যায়নি তাঁর কলম। আর প্রকৃত কবির চেতনা যে হঠকারি হাততালির প্রাবল্যে হারিয়ে যাবে না, তেমনটিই প্রত্যাশিত।  এবং এই প্রত্যাশার পথ দিয়েই ছড়িয়ে পড়তে থাকেন, দীর্ঘায়িত হতে থাকেন কবি অরুণ বসুও। যে ভাবে এক ঝাঁক কলেজ-যুবতীর অধিকার পেয়েও তিনি অতিক্রম করে আসতে পারেন জৈব-চাহিদা, সেভাবেই নতুন প্রজন্মের হাতে রাইফেল তুলে দিয়ে এসে চোখ রাখেন জীবনের অন্য উৎকর্ষে— "হে ভূতনিবহের শস্য, তুমি ওই বৃক্ষের শ্যামল কলরব/ ছুঁয়ে খুব ধীর পায়ে গানের ভিতর দিয়ে হেঁটে যাও লঘু অন্তর্জলি/ তোমার অনন্তলীন ওই দৃষ্টি, মধু বৃষ্টি, পন্নগের বিষ ও উৎসব/ নিবিড় নীলিমাঘন তীব্র অনুসন্ধিৎসার নীলবনস্থলী/ কাকে দিয়ে যেতে চাও ?/ — সে কি তবে ক্ষুরধ্বনি ?"

৩.
অরুণ বসুর যৌনক্রমণ এক অপূর্ব আবিস্কার মানুষের।  মাটিপৃথিবী ও মহাকাশে যেন এক বিরাট ব্যক্তিত্ব ক্রমশই উন্মিলিত হতে থাকে ধাত্রী-মণীষার বিপুল অন্তরাবগহনে।  একদিকে প্রাচ্য ঐতিহ্যের সেই সুদূরব্যাপ্ত রহস্যবিস্ফোটনের অণুকণিকাসম্মৃদ্ধ বিপুলতর সংশ্লেষ, সংস্কৃত কবিতার মুণিকথিত মন্ত্রমধুর মাদকতা— অন্যদিকে স্থির ঋজু ও বিদ্ধতায় জেদি একেকটি বাক্যবিন্যাস, অত্যাধুনিক সংবেদন, অভিব্যক্তির এক গার্হস্থ-স্টাইল : 
                  অগ্নিতো        কখনো ভীত      করে না আমাকে 
                  নিয়ত          মায়ের মতো      মনে হয় তাকে 
                  ছিলো সে      আসঙ্গে বসে      সুমধুর ঢং 
                  আমিতো       প্রকৃত স্থিত       অগ্নিতে বরং      

যৌনক্রমণ থেকে যৌনমুক্তির এক যোগভাষ্য যেন অঘোরপন্থীদের আচার-সর্বস্ব আড়াল থেকে টেনে ছিনিয়ে এনে লোকালয়ে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে অবাধ মাদুর। যেন এক গোপন আস্তাবল থেকে তুলে আনা হলো কোনো দেবশিশুকে, যার কপালে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে মানবমুক্তির একান্ত ইশারা।  সহজ গ্রহণের মধ্যেই জীবনের জটিল প্রাপ্তি দ্রাব্য হয়ে রয়েছে নিবিড় নিঃশ্বাসে-- পরিত্রাণ চাই না, প্রায়শ্চিত্ত নয় বরং মায়ের মুখের মতো যৌনআকুতি থাকুক নান্দনিক পরিচর্যার সহজাত করতলে:
                   সুডোল       বাসনা লোল       ব্রহ্মা-বিষ্ণু-যমও 
                   অবিদ্যা       স্বয়ংসিদ্ধা          নমঃ অগ্নি নমঃ   

৪.
আর্বান-সফিস্টিকেশন নামক মনস্তাত্বিক পরিভাষায় আমরা যে রোদনের পরিবর্তে শোকজ পাথরতায় আপাতত ক্যালাস, সেই শহুরে ব্যাধিকেও উত্তীর্ণ করে কবি খুব সহজেই আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে গিঁথে দেন অন্য এক মর্মান্তিক জিজ্ঞাসায়।  যা একই সাথে আমাদের অস্তিত্বের এক দোলায়মান অবস্থানের অস্বস্তিকর ভঙ্গুরতাকেই নিমেষে দৃশ্যমান করে তোলে মার্ক টোয়েনের মতোই কিছুটা গদ্য-ব্যঞ্জনায়।  যদিও মধ্যবিত্তসুলভ হিউমারের রসভোক্তা পাঠক হিসেবে অত্যন্ত চতুর আমাদেরও বুকের মধ্যে ধক্ করে যেনো ছোটো এক হেঁচকি উঠেই গুলিয়ে যায় জৈববিদ্যার গাণিতিক পরিমিতি। প্রান্তীয় অজ্ঞতার এক মৌন উচ্চারণ কবির আত্মগত জিজ্ঞাসার সীমাক্রান্ত হয়ে চৌচির করে দেয় আমাদের বিজ্ঞানমনস্ক সবজান্তা চোয়াল। বোবাকাঠের মতো পতপত পুড়তে থাকি দিগন্ত পরিবৃত এক চিরায়ত চিতায়, তথাপি নিষ্কৃতি নেই, ঘনিয়ে উঠছে নতুনতর বিস্ময়— "সুধাময় জানতো, একদিন এই কুকুরটা মারা যাবে।  সেই যখন শ্মশানের জঙ্গল থেকে তুলে এনেছিলো তখন থেকেই। সে যাই হোক— মাঝেমাঝেই বোঝার চেষ্টা করতো সুধাময়, মানুষ কুকুর পোষে, নাকি কুকুরই মানুষ পোষে।"  

যদি বলি অরুণ বসুর কবিতায় সম্প্রতি মৃত্যু আলো এবং উপনিষদীয় কিম্বা তন্ত্রজরহস্য ক্রমশই জটিল করে তুলছে এ-হেন কাব্য-চেতনাকে, সে খণ্ডিত মূল্যায়ন।  যদি বলি যৌবনের মার্কসীয় দীক্ষা কবিকে বস্তুতন্ত্রের সীমানায় নিয়ে এসে ব্যর্থতা আর হতাশার সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে নিক্ষেপ করেছে মননীয় আধিভৌতিক রন্ধনশালায়, তবু সে খণ্ডিত।  আর যদি বলি সময়-সচেতন এক সৃজনশীল মণীষা প্রাকৃত নিয়মেই পথ হাঁটতে হাঁটতে ঢুকে গেছে আদিম এক অরণ্যে, যেখানে গাছ-পাতার ফাঁকফোকরে আগুন জ্বালিয়ে প্রতীক্ষা করছে বল্কল পরিহিত তন্দ্রাতুর ব্রহ্মচারীরা চূড়ান্ত কোনো সত্যসাক্ষাতের অস্থির উৎকণ্ঠায়— তথাপি খণ্ডিত হবে সেই ব্যবচ্ছেদ।  বরং সামগ্রিক কবি সত্তাকে মূল্যায়নের দুরূহ দাম্ভিকতাকে দুহাতে সরিয়ে, কবি ব্যক্তিত্বের দুটো-একটা দিকের মধ্যেই সন্ধানকে সীমাবদ্ধ রাখা শ্রেয় বলেই বিবেচিত হোক। যেমন 'বীজ' কবিতায় যখন তিনি লেখেন— "এবং অচিরাৎ নভোনীল ভেদ করে উঠে আসে : (ওঁ অন্ন, ব্রহ্মতেজ, পালকের, আগুনের কণা আর খুদ/ অরণ্য আদিম বিষ্ণুপুরাণের তুমি মাতা,/ ব্রীহির ভিতরে তুমি দুধ)"— এখন প্রশ্ন জাগে, যে কবির ভাষা-চেতনা তাঁকে এতোটাই ধ্রুপদী ভাবনার ঐতিহ্যানুসারী করে রেখেছে, সাম্প্রতিক সংকটের মুখোমুখি হলে কিম্বা সময়ের সম্ভাব্য উত্তরণের ইঙ্গিতবাহী হতে গিয়ে তাঁর কলমের হঠাৎই ঐতিহ্যের পিচ্ছিল পুনরাবৃত্ত্যানুসারী হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু হয়নি। এই না-হওয়া বা ব্যতিক্রমীভাবে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠাই অরুণ বসু। উল্লিখিত 'বীজ' কবিতার শুরুর লাইনগুলো একবার স্মরণ করা যেতে পারে— "যদি একখণ্ড পবিত্র ভারতীয় সংবিধান উপহার দিই, তোমাকে সুধাময়, তুমি কি বিশ্ব সংসারের সমস্ত গণতান্ত্রিক অনুশাসনকে অক্লেশে লাথি মেরে বলবে না : আদিম সাম্যবাদ, আমি এখনো তোমাকে প্রণাম করি।" —হ্যাঁ, অরুণ বসু এভাবেই ঐতিহ্যের বিকারগ্রস্ত ভূতগুলিকে আছাড়ে আছাড়ে নিংড়ে, সমসময়ের মর্মমূলে তাকে প্রতিস্থাপিত করে নবনির্মিতির জাদুদণ্ডে আচ্ছন্ন করে দিতে পারেন আমাদের অতি-আধুনিক ভাষা-বিলাস এবং ভাবনার দৈন্যতা। বিষয় নির্বাচনের উদ্ভট খেয়ালে আমরা যখন নক্ষত্রলোকে অলীক ভ্রাম্যমানতায় দিশাহারা, অরুণ বসু তখন হাজার বছরের প্রাচীন সেই বীজ অন্বেষণের প্রবীণ চিবুকগুলো থেকে টোকা মেরে ঝরিয়ে দিতে থাকেন আজকের সময়ের মধ্যে তার তেজস্ক্রিয় এবং গ্রহণীয় বিচ্ছুরণ। বাকিটুকু চলে যায় অন্ধদের কয়েদখানায়। যেখানে মাদকময় প্রাচুর্যের সঙ্গে ভাষাকে মিশিয়ে, অন্ধের হস্তীদর্শনের প্রেরণায় তিমির বিলাসী হারিয়ে যায় কর্দমাক্ত টানেলে।  


ভিতরে ষোড়শ-দল ভারি চমৎকার  

১.
আরোগ্যের শিহরণ থেকে উঠে আসে যে সৃজন-প্রকরণ বোধ হয় তারই নাম নির্বাচিত অরুণ। কবিতা রচনার শীতলতা তাঁকে কখনো গ্রাস করে না। আবিদ্ধ পাঁজরের নীচে লুকোনো যন্ত্রণাটিকে বাতাসে টাঙাতে বরং সে নির্ভয়। যাবতীয় ভূত ও ভবিষ্যৎ চিবিয়ে নিংড়ে ছড়িয়ে রাখছে ছন্দ ও শব্দের সাযুজ্যময় কঠিন বারান্দায়। ভাবনার এতো স্বচ্ছ ঋজুতা যা ভাস্কর্যের সাদৃশ্য থেকে সীমায়িত দূরত্বের— খুব চোখে পরে কম। লিরিক ও বেদনা-সর্বস্ব বাংলা কবিতায় সংস্কৃত শব্দের সাম্রাজ্যবাদী শৌর্য যেভাবে আজকের তামাশার মধ্যে টেনে নামিয়েও তাকে জীবন্ত রেখেছেন— দৃষ্টান্ত বিরল।  ষড়ৈশ্বর্য যেনো অরুণ বসুর অক্ষরযাত্রার এক অবধারিত নো-ম্যান্স-ল্যান্ড।  ঢুকে পড়েছেন কিভাবে যেন মস্তিস্ক চেবাতে চেবাতে। নিজেকে খাওয়ার এত মজার মাইথোলজিক্যাল আর্কেটাইপ বোধ হয় ছিন্নমস্তার স্ব-শোণিত পান। এই আরোগ্য তাকে লাথি মারতে শিখিয়েছে, জ্ঞান দিতে শিখিয়েছে, পাঠকের কলার ধরে অত্যন্ত রোয়াবে দেখিয়ে দিয়েছে "আমি চাই অস্ত্রের বিরুদ্ধে আজ/ অস্ত্র এসে/ মানুষের নিরস্ত্রীকরণের/ প্রতি শান্ত সমাহিত করুক এবার।" অরুণ বসু এক এস্কেপিস্ট ইন্টেলেকচুয়াল।  জীবনে গদ্য লিখলেন কম।  নিজের নির্বাচিতের ভূমিকার জন্য প্রকাশকের আবেদনে অবশেষে অনেক সন্ধ্যা রাত্রি টপকে এলো কূটাভাস।  এই ধুরন্ধর বুদ্ধিজীবী শুধু কবিতায় পেড়ে ফেলেছেন আকাশভূমি ও পাতালের যাবতীয় কূটঅভিসন্ধি, মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার ও এতটুকু গ্রহের একভাগে গাদাগাদি বন্দী করবার ষড়যন্ত্র।  হাতে ছিল নিষ্ঠচর্চা, পাঠ ও পাঁঠা বানাবার মত ভয়ঙ্কর স্বদেশীয় তন্ত্র ও পুরাণ।  ইংরেজি, জার্মানি, ফরাসিতে বিশেষজ্ঞ হবার র‍্যাটরেসে যখন প্রজন্ম তাড়িত, তিনি তখন বাংলা ভাষার পেটে চুপি চুপি চালান করছেন সংস্কৃত ভাষার প্রায়-লুপ্ত শেকড়-বাকড়।  কি অসাধারণ অহংকারী একেকটি কবিতা নির্মাণ। কবিতার নাম 'শোণিতাদ্র সনেট', 'ধান্তারি অথবা ব্রীহিবন্দনার স্বপ্ন'। সভ্যতা ধ্বংসের পর আণবিক ছাই থেকেও যেন ঠিকরে বেরোবে বাংলা কবিতার দাঁত।  আমরা ছিলাম নয়, আছি। এই থাকাটা কেলুরামের "তোমার ওপর আমি শুলাম, আমার ওপর তুমি"— গোছের কোন কাব্য-অর্গাজম নয়। এ হচ্ছে লিখতে চাইছি এবং লিখছি গোছের এক সচেতন অহংকার। "বাঘের পায়ের ছাপ, অরণ্যের আদিম মগ্নতা ধরে টানে —/সাপের শরীর বিষ, ভ্রূণমঞ্জরীর পাশে অর্ধনিমীলিত/ পৌরুষশাসিত তার নপুংসক-নক্ষত্রমণ্ডলী।" রসবোধ কতটা আকরিক হয়ে উঠলে এবং একই সঙ্গে আক্রমণাত্মক— ছন্দচিপে লেখা যায়: 
                   তুণ্ডল       স্বপ্নের ফুল      নিরন্নের ভাতি 
                   বিমর্ষ       ভারতবর্ষ        হবে না  পোয়াতি ? 

যে পাঠক প্রতিনিয়ত দেশপ্রেমের এবং জনগণকে উদ্ধারের চোঙা ও চকচকে মিডিয়ার কলমে কণ্ঠে ছবিতে গ্যাঙ-রেপড্, তাদের কাছে কি এই 'ভারতবর্ষ' ও পোয়াতি শব্দদুটো জীবনে অন্ততঃ একবারের জন্য ধর্ষণ করবার অধিকার পেতে নাড়িয়ে দেবে না অস্তিত্ব ! অরুণ বসু জনপদের জোয়ারে তার সৌখিন বজরা দুলিয়ে কেলোয়াতি করতে কবিতা লেখেননি, তাই কেতাহীন বলে ফেলতে পারেন ''প্রতিষ্ঠান— বিষ্ঠালীন সোনার হরিণ; তার মায়ার বাইরে এসে আজ/ সারা পথ ঐরাবত, উড়ে যায় কাক।'' ঐরাবত বলেই ঐরাবতী শক্তিতেই টান মেরেছেন আদিকালের মনন-মণীষার পাহাড় প্রমাণ ভয়-দেখানো দৈত্যকে, শুধু টানই নয়, একালের নরক যন্ত্রণার কফথুতুলালায় চুবিয়ে তাকে দাঁড় করিয়েছেন নগর-গণিকার উদোম জংঘার সামনে— হয় উন্নীত হও নান্দনিক উড়ালে, নতুবা বিদ্ধ হও নখ আর সমূহ মাড়িতে।  এবং কবি তাঁর বলিষ্ঠ পাঞ্জায় ফাটাফাটি করছেন শব্দ ও অলংকারের ধ্রুপদী ডিভান্ "এক হাতে শঙ্খ তার অন্যহাতে ছুরি/ কে ভুনিখিচুড়ি খেয়ে করে শাস্ত্র চুরি"। কিংবা "ধর্ম জানি কর্ম ছাড়া শুধু ঢঙ-করা/ যে-জন বঞ্চিত, তার ভিতরে শঙ্করা"।


২.
চলুন ঢুকে পড়া যাক খোসা-ছাড়ানো অরুণ বসুর কবিতা মহলে। একের পর এক মুগ্ধতার সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে যেই ছাদে উঠবার বাসনা জাগবে, চরম এক বৈপরীত্যে আছাড় খাবেন শব্দভুবনে।  ট্রাজিক হিরোর মতো কি শোচনীয় অসহায়ত্বে ছিবড়ে নিয়ে বসে আছেন একেকজন সমালোচক— প্রাসঙ্গিকতা এবং সাযুজ্যের অভাব।  'বাঁশি' কবিতার প্রারম্ভিক পংক্তিই যথেষ্ট এর নমুনা রাখতে।  "বাঁশি, তুমি সৌরবীজ—ক্ষার অবয়বী/ তোমার বিবাহ ছিল, ছিল প্রেম;/ — ছিল না পদবী ?" বলুন পাঠক, অত্যন্ত ধ্রুপদী এই শুরুর মেজাজের সঙ্গে দ্বিতীয় লাইনের প্রাসঙ্গিকতা কিভাবে টানবেন কিংবা তৃতীয়ের ! কিভাবে সম্পর্ক গড়বেন সৌরবীজ, ক্ষার এবং বিবাহ, প্রেম ও পদবীর সঙ্গে ! যে পংক্তির ওজন প্রথমেই পাঠক চেতনায় দীর্ঘ এক সড়ক খুলে দিলো মহাজাগতিক পর্যবেক্ষণ ও আত্ম-উন্মোচনের, পদবী শব্দে এসেই যেন ভাগাড়ে গোঁত্তা।  বস্তুত এই হচ্ছে অরুণ বসু যে স্বেচ্ছাচারিতায় একাকার করে ফেলতে পারেন ধ্রুপদী ভাবনার সঙ্গে সমসময়ের তাৎক্ষণিক বিকারসর্বস্বতা। পারেন শব্দ ও ছন্দ প্রয়োগের কারিগরী দক্ষতায়।  অনেকটাই প্রফেশনাল ক্র্যাফ্টসম্যানশিপের চূড়ান্ত সফল নির্মাণ, তথাপিও গভীরে ছড়িয়ে যায় আরও এক সন্ধানের খাড়ি।  বিবাহ প্রেম ও পদবী উবু হয়ে গিয়ে চৈতন্যে লটকে থাকে সৌরবীজ—খার—অবয়বী। এবং সেটা কি ? বাঁশি।  কবিতার হাজার বছর ধরে বাংলা ভাষায় ঘুরতে থাকবে প্রথম লাইনের শাব্দিক ভাস্কর্য। ''বাঁশি, তুমি সৌরবীজ—ক্ষার অবয়বী''। অরুণ কবি এই শব্দ প্রয়োগের কারিগরী সম্বন্ধে এতটাই সচেতন যে তাঁকে 'মেঘ ও মৃত্যুর শব্দে' কৈফিয়ৎ দেবার ঢঙে বলে যেতে হয় লম্বা ফিরিস্তি। কখনও শব্দ বোষ্টমীর রসকলি, কখনও জল, কখনও পরস্মৈপদী ভাষ্যকার ইত্যাদি। এবং পরিশেষে স্বীকার করতেই হয় "তুমি/ নাভির সুঘ্রাণ, তুমি নারী/ তুমি চির-অন্তঃস্বত্ত্বা— পৃথিবীতে তোমার ঘুম নেই"। শব্দ এত কিছু কিনা জানি না; তবে তিনি যে শব্দকে অন্তঃস্বত্ত্বা বানাবার খেলায় উত্তপ্ত ও মশগুল সেই সত্যকে বোধহয় প্রতিষ্ঠা করাই শ্রেয়।  বিবাহিতা সহধর্মিণী ব্যতীত তাঁর জীবনে অন্য কোনও নারীর উপস্থিতি অন্ততঃ ওষ্ঠে বা নখের ডগাতেও ছিল কি না জানা নেই, তবে স্বাভাবিক ভাবেই লিবিডো উপুড় হয়েছে শব্দেই, বারবার, এ কথা কবিরই স্বীকারোক্তি উপরোক্ত কবিতায়। বাধ্যতই অরুণ বসুর রসকেলিতে এত থাবার চিহ্ন।  সৃজন যে প্রকৃতই হিংস্র সঙ্গম। তারই লাইন '—এবং অস্বাভাবিক হিংস্র/ স্বভাবের পুনরুত্থানে যদিও তুমি/ মাঝে মাঝে কবিতার নম্র কলরোলে/ আমাকে আঘাত হানো সচেতনতায়"। পাঠক বোধহয় উপলব্ধি করতে পারছেন একদার ক্ষুধার্ত আন্দোলনের মুঠো নিংড়ে পিছলে-আসা এই দামাল অরুণের নির্মাণের জেদ কতটা তীব্র হলে সে নিজস্ব কাব্যভাষা খুঁজে নিতে পারে নিজস্ব ছন্দে। স্বাভাবিকভাবেই নিজস্ব চলনে 'মেঘ ও মৃত্যুর শব্দ' চটকে তাঁকে খুঁজে নিতে হয় 'ভুবন ও কামপোকা'। কিন্তু কবি যেহেতু অরুণ বসু তাই বৈপরীত্যও ফণা তুলে গ্রাস করে পাঠক-প্রত্যাশা। 


৩.
ভুবন ও কামপোকা জুড়ে কবির সাঁতার এক মহাজাগতিক নীলিমায়।  ভুবন যেন বাস্তবতার গন্ডী পেরিয়ে হয়ে উঠেছে পরাবাস্তবতার সেতুচিহ্ন।  কামপোকা বস্তুতঃ যেন আধিভৌতিক মান্দাস যার নীরব বৈঠায় এযাবৎ পৃথিবীর আদিব্যাধি অবদমন সব কেমন ঊর্ধমুখী, মেটাফিজিক্যাল। "শায়িত শূন্যের 'পরে, আমি কিন্তু শরশয্যা কখনও নেবো না।" এই স্পর্ধাটুকু আছে বলেই রক্ত-মাংস-হাড়ের রসায়ণ ছাড়িয়ে ক্রমশ চলে যাওয়া-কে রুখতে চাইছেন আপ্রাণ ও অসহায়।  কল্পনাও হয়ে উঠছে জটিল রটনা— "বরং অদূরে চেয়ে দ্যাখ্ ওই ধ্রুব/ সমুদ্রে নীল একটি অলীক-কুবো/ ডাকে কুব্ কুব্, কাছে আসে, বলে : শুভ....।" বস্তুতঃ সংঘাতদীর্ণ জীবনসত্যের প্রাত্যহিক সংঘাত তাকে আর মুগ্ধ করে না, সে যেন শব্দের দাঁতে লটকে যাওয়া একটি স্বদেশী মানুষশাবক।  এখানে সেখানে, এদিক সেদিক ঘুরে ফিরে আসছেন অপ্রতিহত আকাশ সংকেতে। "আমি শুধু বিজ্ঞানবিমুখ/ উৎসে ফিরে যেতে গিয়ে, দেখেছি, ঘুমিয়ে আছে/ আমারই ভিতরে এক ত্রিকালজ্ঞ কাক"। কবি শূন্যবন্দী ঘোর তমসায় বীর্য পেরিয়ে পথ খুঁজছেন নাক্ষত্রিক গোলকধাঁধায়।  মাঝে মাঝে সংস্কারের থাবায় কঁকিয়ে উঠে ফেরাতে চাইছেন ভূমিবোধ, তবু যেন ভূমিতাকে প্রত্যাখ্যান করছে প্রাকৃত-রমণে। আর্তি তাই গভীর —
                    আমাকে নিয়ে চলো ওই তো মহাসুখ
                    সম্ভাবনাময় শস্যে নাও শুষে
                    আমাকে নিয়ে চলো গভীর সূচিমুখ 
                    আচ্ছাদনে লীন পাথরে, পৌরুষে 
অর্থাৎ কবির ভুবন বা কামপোকা কিছুই আর তাকে ফেরাতে পারছে না তারুণ্যের সুঠাম কব্জিতে।  পিছল্ পিছলতর ভাঙনে ভাসমান তার শব্দসঙ্গম। যাবতীয় সিমিলি সিমেট্রি সিনটেক্স কিভাবে অপৌরুষ আঁচে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে দূর কোন নক্ষত্র-নগরে কিংবা সেই নাক্ষত্রিক মেলার অনন্ত অভ্যন্তরে আরও কোন গভীর আহ্বান বহন করছে এই মানবসন্তান যে কবি যার প্রথম পৌরুষ পান করেছে শব্দরমণী।  'শোকগাথা' কবিতার শেষ পংক্তি "আজ যদি আমি শব্দে, সুরে, বাদ্যযন্ত্র হয়ে ছড়িয়ে পড়ি দূরে দূরে, বহুদূরে; তোমাদের কি কষ্ট হবে, খুব?" ভুবন ও কামপোকা বস্তুতঃ কবিব্যক্তিত্বের এক চরমতম অবস্থান যেখানে দাঁড়িয়ে পাকস্থলী ও মস্তিষ্ক এমনকি লিঙ্গঅবস্থানেরও ভূগোল জড়িয়ে আবছা এক চেতনপ্রান্তর জুড়ে জেগে ওঠে অবোধ বালক। চতুর্দিকে বিস্ময় আর বিস্ময়ের ব্যাপ্তি জড়িয়ে শুধুই প্রশ্ন, শুধুই খুঁজে যাওয়া যার স্পষ্টতম উচ্চারণ এলিয়টের কলমে who is the third beside you ? এই ভূতগ্রস্ত অতিপ্রাকৃত অন্বেষণ মানুষের শিল্প-কবিতাকেও বোধহয় এক অতিমানবিক মহিমায় নান্দনিক করে তোলে আর সে জন্যই বোধহয় নন্দনতত্ত্বের বিষয় ও বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যায় ভিন্নভিন্ন ব্যক্তিত্বের চিন্তা ও অভিব্যক্তির এত ভিন্নতর ইঙ্গিত। অরুণ বসুর ভুবন যেন প্রাত্যহিক জীবন বন্দী রেখে জীবিকার যুদ্ধে বিদ্ধস্ত মানবতার প্রকৃত সহোদর হয়ে টান করে মেলে ধরতে পারে না দু-পায়ের মাটি ততটাই নির্বিবাদ কামপোকার কামড়ে কিছুটা তেতে ওঠার মজার চাইতে বরং ঘুমিয়ে পড়বার আয়োজন হয়ে উঠেছে ঘন। নামচিন্তনে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তা থাকলেও কবিতাগুলো মন্দির প্রাঙ্গণের ভক্ত-জমায়েতে জমিয়ে কোনো ভক্তির যোগানদার রসিয়ে শোনাতে পারেন ইতর-কথন। আহা, কি ঘন ব্যাখ্যা যোগানো যায়, "পুলক শুরুর মুখে উড়ে এসে পড়েছিল মিলনমুহুর্তে একটি পাখির পালক"— এমন সুখাদ্য শব্দ ব্যতীত শৃঙ্গার রস বোঝানো কত কঠিন হবে শুদ্ধতাবাদীদের। কিংবা 'যৌনতা' কবিতায় "মণিমালা শুয়ে আছে মানস-জঙ্গলে"। অরুণ বসুর কামপোকা হিরণ্ময় বটব্যালের পূর্ণফোটা ষোড়শী মেয়েটির কাতর বাথরুমে ঢুকে সাবানে জড়াতে পারে না রোঁয়া, তাকে খুঁজে পেতে হয় মানস-জঙ্গলে।  এই জন্যই কবির আকাশজুড়ে অন্য এক মহাজাগতিক ক্রমণ। আমরা মাটির মানুষ দাঁতে নখে সহস্র নেশায় চৌচির, মনে হয় একটু দাঁড়িয়ে অন্তত শব্দের ছ্যাঁকা খেয়ে আরো একটি মুহুর্ত জীবনে জীবন যোগ করি। অবশেষে মোহমুক্তি ঘটেছে কবিরও। কামপোকার শেষ নির্বাচন 'ক্ষুধার্ত'— "এখন ক্ষুধার্ত আমি। এখন তৈজশ/ এমনকি যদি চাও, কাঁচা মাংস, নিঃশব্দেই খাবো/ মাধ্যাকর্ষণের নিচে, প্রভঞ্জন, তবে কি তুমিও ক্ষুধাতুর ?" এবং এখান থেকে কবি হাঁটছেন চতুর্দশপদী ও ষড়ৈশ্বর্যে।  আপাতত এখানেই থামাতে হচ্ছে কলম কারণ ষড়ৈশ্বর্য নিয়ে একটি একক রচনার মতো যোগ্যতায় বাংলা কবিতাকে পৌঁছে দিয়েছে বলেই অরুণ বসুর জন্য এতো দীর্ঘ শব্দবন্ধ খরচ করা হলো। শুধু এটুকু কৈফিয়ৎ কবির কাছে তার ষড়ৈশ্বর্যের পংক্তি চুরি করেই দিতে হয়—
                     তস্করের মতো আমি শুষে নিয়ে তাকে 
                     পৌঁছে যাবো অনন্তের অন্তহীন বাঁকে।।